৮৬।
রাশেদ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আস্তে আস্তে তার অজান্তে দুচোখ টলমল করে উঠল। এইটুকু ছেলে বলে কি? তার কণ্ঠ চেপে আসল। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। মনি দেখ, এইটুক ছেলে বলে কি? মনে মনে মনিকে ডেকে এনে দেখিয়ে বললো দেখ
৮৫।
কাজের শেষে উপরে এসে দেখে প্রবীণ বসে সিগারেট টানছে। নেপালি বলে ওরা কেও যেমন একে কাছে টানে না তেমনি এও ওদের সাথে তেমন মিশতে চায় না। কাজের শেষে কখনও নিচে যায় শুধু টিভি দেখার জন্যে। কিছুক্ষণের জন্যে যায়, খবর দেখেই চলে আসে।
-আরে ভাইয়া
৮৩।
পরের অফ ডেতে সকালে উঠে নাস্তা সেরে দেরি না করে বেরিয়ে পরলেন অক্সফোর্ডের উদ্দেশ্যে। চেনা পথ, সেদিন যেখান থেকে গিয়েছিলেন সেই ভাবে এসে অক্সফোর্ড থেকে লন্ডনের রিটার্ন টিকেট কিনলেন। ফিরবেন আগামীকাল। গত সপ্তাহে ফিরোজের সাথে কথা হয়েছে। ও বলেছে সরাসরি ব্রিকলেন যেতে। ওখান থেকে
৮২।
এর মধ্যে আসাদ সাহেব চলে গেছে। তার জায়গায় প্রবীণ নামে নেপালি এক ছেলে এসেছে। প্রবীণ আসাতে নুরুল ইসলাম নিচের রুমে চলে গেছে। এখন তার রুম মেট প্রবীণ। অল্প বয়সের ছেলে। লেখাপড়ার নাম করে এদেশে এসেছে কিন্তু কলেজে নাম লিখিয়ে রেখে কাজ করে যাচ্ছে দুই
৮১।
এর মধ্যে তিন দিন অফ গেছে। অপেক্ষায় থেকেছে পরবর্তী অফের দিন মেইল পাবে। তার নয়ন মনিরা সবাই চিঠি লিখবে, তার মনি লিখবে। প্রতি অফের দিনে সাত দিনের প্রতীক্ষিত মেইলের আশায় লাইবেরিতে গেছে। বাড়ি থেকে পাঠানো মেইল মন দিয়ে পড়েছ। এক বার, দুই বার, কয়েক
৮০।
আজ শুক্রবার। বিকেলে রেস্টুরেন্ট খোলার পর থেকেই শুরু হলো সেফ এর চিৎকার চেঁচামেচি। রাশেদ সাহেব রীতিমত ভয় পেয়ে গেলেন, এ কয়দিন তবুও কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু আজ সবই কেন যেন ভুল হচ্ছে। এখানে ভুল ওখানে ভুল, আর সেই সুযোগে সেফ এর অশ্লীল গালাগালি। রাশেদ
৭৮।
রাশেদ সাহেব উপরে এসে এবারে কাপর বদলিয়ে বিছানায় বসে একটা সিগারেট জ্বালালেন। আবার টেলিফোনের কথা মনে হলো। এখানে কাল ঈদ আমাদের দেশে পরশু ঈদ। মেয়েদের কথা মনে হলো। ভাগ্যের অন্বেষণে অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বাবাকে ছাড়া কি ভাবে ওরা ঈদ করবে? ওরা বড় হয়েছে
৭৭।
রাশেদ সাহেব উপরে এসে ফোন ধরলেন।
-হ্যালো
ওপাশ থেকে মেঝো ভাইয়ের কণ্ঠ-
-সালামালেকুম, কেমন আছেন?
-হ্যাঁ চলছে একরকম।
-কাজকর্ম কেমন?
-খুব কষ্ট, জীবনে অনেক কষ্টের কাজ করেছি কিন্তু এই কষ্ট তার কাছে কিছুই না। এখন বয়সও হয়েছে পারছি না। যা আছে তাও যদি একটু ধীরে সুস্থে হোত করা যেত, তাহলে
৭৬।
এখানে বসে আরও কয়েকটা পাব দেখা যাচ্ছে ভিতরে মৃদু বাজনার শব্দ আসছে। আজ মঙ্গল বার তাই ভিড় নেই। হাতের সিগারেটটা শেষ হলে ফেলে দিয়ে এবারে উঠে দাঁড়ালেন। রেস্টুরেন্টে ঢুকার পথে কিচেনের ভিতর দিয়ে ঢুকতে হয়। তাকে দেখেই বলে উঠলো কি ভাই সাহেব কোথায় গেছিলেন?
৭৫।
চারদিকে দেখতে দেখতে হেঁটে সমারফিল্ডে ঢুকলেন। এক পাশে লাইন ধরে সাজানো ট্রলি রয়েছে যে বেশি বাজার করবে সে এখান থেকে একটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এখানেও সিকিউরিটি গেট এবং অটোমেটিক দরজার সামনে আসতেই দরজা খুলে গেলো। ভেতরে ঢুকেই গরমের ছোঁয়া। গেটের ভিতরেই প্লাস্টিকের ঝুরি সাজানো
৭৪।
ফোন রেখে রাশেদ সাহেব রুমে এসে বাইরে যাবার শীতের কাপর পরে হ্যান্ড গ্লোভস পকেটে নিয়ে নিচে এসে সেদিন কবিরের দেখিয়ে দেয়া গোপন জায়গা থেকে চাবি নিয়ে বাইরে বের হয়ে দরজায় তালা দিয়ে আবার গোপন জায়গায় চাবিটা রেখে কবিরের দেখানো পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলেন।
৭৩।
একটু বেশিক্ষণ ঘুমাতে চাইলেও হলো না। সারে এগারোটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে নামাজ পড়ে রাতে ভিজিয়ে রাখা কাপর গুলি ধুয়ে শুকাতে দিয়ে রুমে এসে বসলেন। আজ বাসায় ফোন করতে হবে। মনি পৌঁছার পরে মনির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ঘড়িতে প্রায় একটা বেজে গেছে।
৭১।
নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বিসমিল্লা বলে টাকাটা পকেটে ভরে উপরে উঠে আসলেন। এসেই আবার নিঃসঙ্গ একা। টাকাটা পকেট থেকে বের করে দেখলো। টাকা নয় পাউন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং। ব্রিটেনের রানীর মাথার ছবি আঁকা ব্রিটিশ পাউন্ড। বিশ্বের সবচেয়ে দামি নোট। যার এক পাউন্ডের মূল্য বর্তমানে বাংলাদেশের বিরানব্বই
৭০।
মনে আর কত থাকবে? তুমি তো জান না মারুফ আমার মনে কত বোঝা বয়ে বেড়াই। এতো বোঝা মাথায় রেখে আর কত মনে রাখা যায়? এই যে কথায় কথায় ভুলে যাই আমি এমন ছিলাম না। আমার মা বাজার থেকে কখনো কিছু আনার কথা বললে সে
৬৯।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ শুনে উঠে দাঁড়ালো। লোকজন উঠছে। বারোটা বাজার দশ মিনিট বাকি। কাজের পোষাক পরে নিচে নেমে এলো। কিচেনের লাইট জ্বালিয়ে গত দুই দিনের অভিজ্ঞতায় যা যা করতে হবে তা করতে করতে কবির নেমে এলো।
-ভাইছাব ঐ মাঝারি ডেকচিটায় চার পট চাউল আনেন।
-আচ্ছা আনছি,