কালঝড়ের প্রশাখার দিকে তাকাই। আজ মন
ভালো নেই স্ট্যাচু অব লিবার্টি কন্যার। কয়েক দফা
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর খুব মন ভারী করে আছে আকাশ
পাখিদের নীরবতা দেখে, অনুমান করছি – পৃথিবীর
অন্য কোথাও এই ঝড় রেখে যাচ্ছে তার দাগ,
মানুষ ছুটছে, মানুষ ছুটছে, মানুষ ছুটছে
নীরব আরাধনায় যেখানে বসে আছেন আমার
মানুষের কাতারে দাঁড়াবার দৌড়ে আমি বারবারই পরাজিত হই।
আমার শয়নকক্ষে যে অর্ধভাঙা ঝাড়বাতি দু’দশক থেকে ঝুলে
আছে, তা বদলাবার সাধ্য আমার জুটেনি এখনও। তাই মাঝে
মাঝে বাতিটির অর্ধ আলোয় নিজেকে চিনতে বার বার ভুল করি।
নিজস্ব কোনো ইমেজ না থাকায় কখনও ঢেউ, কখনও ধ্বনির কাছ
থেকে ধার নিই উত্থান
কয়েকটি বিলাপ গেঁথে গেঁথে মেঘও রেখে যায় তার ভূমিষ্ট ছায়াডোর
পৃথক কোনো স্বার্থ নেই নিমগ্ন মাটিরও,
মেঘ ও মাটি পরস্পরের দেখা পেলে নিমিষেই মিতা হয়ে যায়
সবগুলো মিথ অস্বীকার করে তারা পরে নেয় একই পোশাক।
ভোরের পরিষেবা গ্রহণ করে সেরে উঠে সমগ্র ক্রান্তিকাল থেকে।
নদীরা নিরক্ষর নয়। তাই তারাও
এসো প্রাণের বদলে আগুনকেই শুকিয়ে,
স্তরে স্তরে এই পথে রাখি।
যে পথে সহস্র কররেখা উঁচিয়ে
একদিন হেঁটে গিয়েছিল সহস্র পালক।
যে রোদে, একদিন বিন্যস্ত হয়েছিল আমাদের
উজ্জ্বল ভাগ্যরেখা। আর বাজপাখিরা গোলাপের
প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দখল করতে চেয়েছিল, গোলাপের
ভালোবাসার আকাশ।
আকাশে মূলত প্রাণগুলোই নক্ষত্র হয়ে স্থির হয় অবশেষে।
সারি সারি
একদিন আমিও দরবার খুলে টাঙাবো লাল চাদোয়া
তারপর ডেকে বলবো- এসো হে নক্ষত্রসমাজ,
এসো সূর্যপরীরা,
আমার হাত ধরে গ্রহণ করো আলোর বয়েত,
তোমরা যারা এই পৃথিবীকে আর ছটা দিতে পারছো না
তারা বদলে দাও নিজেদের খোলস
তারপর অন্য কোনো নামে ফেরি করো ঝাড়বাতি।
একদিন আমিও তরবারি হাতে চলে যাবো সকল
যারা পেয়ে যায় আন্তর্জাতিক প্রবেশাধিকার শুধু তারাই বলতে পারে আমার
কোনো দেশ নেই। পৃথিবী স্বদেশ আমার- এমন উচ্চারণে কাব্যপংক্তিমালায়
কন্ঠ মিলায় কবিও। আর প্রকৃতই উদ্বাস্তু যারা, তারা একটুকরো ভিটের স্বপ্ন
দেখে কাটিয়ে দেয় ভিনগ্রহের জীবন। মার্কিনী নীল পাসপোর্ট পাবার পর যাদের
জন্য উঠে গেছে সিংহভাগ রাষ্ট্র সীমান্তের ব্যারিকেড,
পৃথিবী আপাতত বেঁচে থাক অন্ধ হয়ে। চলো, আলোর
আয়োজনে আমরা পূরণ করি তরুপ্রতিম সবুজের ছায়া।
তারপর বিলিয়ে দিই, এইসব পূরণ ও প্রমাণ। যারা নিতে
চাইবে – তাদের হাতেই তুলে দেবো দুপুর, দীনতা ও দ্রোহ।
অন্ধত্বের দ্বিতীয় অভিষেক সেরে যারা আমূল গৃহহীন, তাদেরকে
দেখিয়ে যাই
মৃত পাখির হাড় থেকে জন্ম নিয়েছিল যে পাথর
অলক্ষ্যেই অনেক কিছু আমার দেখা হয়ে যায়। মৃত পাখির হাড় থেকে
জন্ম নিয়েছিল যে পাথর তার উপর জন্মেছে একটি বৃক্ষ, সেই বৃক্ষে ফুটে
আছে একটি নামহীন ফুল। ফুলটি কী তবে সেই পাখির ডানাচিহ্ন! আর
বৃক্ষটি কী তবে পাখির সহদোরা!
সেই দৃশ্য আবার ফিরে আসুক। সেই সমতল ভূমির মন লিখে
রাখুক নাগরী হরফে তাদের পদচিহ্নাবলী। আর যারা পদাতিক
পাতার আড়ালে বার বার লুকিয়েছে নিজেদের কৃতিদিন-স্মৃতিরাত,
প্রভাত হবার আগে জেগেছে চৈতন্যে। বনকে ভালোবেসে সেজেছে
পুষ্পে, নদীকে ভালোবেসে বয়ে গেছে নৈঋতে। দিতে কিছু মন আর
নিকষিত কালের কদম, হিজল – জারুল
পথিক ও পরাণপর্ব
কতটা পথ হাঁটলে হওয়া যায় পথিক! কতটুকু ভূমি
পেলে নির্মাণ করা যায় একটি সড়ক, তা ভেবে আমি,
কখনোই পথে দাঁঁড়াই’নি। বরং কয়েকটি হাসনা-হেনার
ডাল রুয়ে রেখেছি, পথের দু’পাশে। কেউ এসে
নেবে সেই সুবাস।
অথবা কেউ পাঠ করবে মমিচিত্র, মনচিত্র, মানচিত্র
এমন আরাধনায় সাজিয়েছি ভোর, সেরেছি
পরাণপর্বের পঞ্চম সুরবীক্ষণ।
মানুষেরা অনেক
আমাকে প্রহার করছো মাটি,
আমাকে-
প্রহার করছো আকাশ, এই সবুজ
সকাল ঘিরে আজ উঠবে যে সূর্য,
আমি তার কাছে কোনো নালিশ
জানাবো না। শুধু লিখে যাবো
এই বিষণ্ণ প্রহরে, আমি যখন একা
দাঁড়িয়েছিলাম, আমাকে উদ্ধারে
একটি বারও নামেনি ঝড়। একটুও
এগিয়ে আসেনি শীতলক্ষ্যা নদী।
আমার চারপাশে এখন গলিত মাংসের দোকান-
ঝরে পড়ছে লাল মাংস থেকে রক্তের ফোটা
কাঁপছে মাংস, ঢেউ তোলে ভ্রমণ করছে আমার দক্ষিণ
উত্তরে, বাড়ন্ত আলু ক্ষেতের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে,
নতুন মাংসমূল।
থেতলে যাওয়া বাহু থেকে নীল মাংসের
ক্ষত, চিহ্নায়নে এগিয়ে আসছে না কেউ-
কেউ উপুড় হয়ে পড়ে থাকা পাঁজরের মাংসের
পাশে দাঁড়িয়ে তুলে
গোল হয়ে বসে থাকে দুপুরের দুঃখ। কেউ দেখতে আসেনি আজ, -সেই
বেদনায় মাথা নত করে থাকে অভিমানী মাঘের মেয়ে। এই বসন্ত
এর আগেও কারারুদ্ধ ছিল। এই শীতের শেষে, মাটিচিহ্নে পড়েছিল অগোছালো পুষ্পের ছায়া।
রুদ্ধশ্বাসে উড়ে যাচ্ছে মেঘের গোলন্দাজ বাহিনী। কোনো যুদ্ধ নয়, তবুও
দেশ ছেড়ে অন্যদেশে দখলের পতাকা
ছাপতন্ত্র
তোমার চোখের দিকে তাকালেই আমি জেনে যাই
আমার সীমাবদ্ধতা। জেনে যাই, বোশেখ আসার আগেই
এই নগরে নামবে ঝড়। বিদায়ী চৈত্রের তাণ্ডবরেখা
উড়িয়ে নেবে আমার দারিদ্র, দীনতা, দু’খের দরজা,
কেবল জানালাটি তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে
আর বলবে তুমি কি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাও
কবি! আরও কিছুদিন হতে চাও বেদনার