রক্তসিথান। বইনের নতমুখ হুশিয়ার করে
এই মাটির খোয়াব শুভ নয়। কান
পাতি শুনি পিতৃপুরুষের জোরধ্বনি
এই মাটি তোর, এই তো মা- ভূমি। এই নুড়িপথ, জঙলার ফুল বরকল ছায়া,
পানছড়ি দিঘিনালা, এই মেঘমাখা
পাহাড় কর্ণফুলির চকচকা মাছ
নিত্য করে ছল মোর সাথে।
মুই মারমা মুরং।
মুই

অব্যক্ত কথা, যা কিনা বলা যায় না
পড়ে রয় মন মস্তিস্কের এক কোণে
ঠিক ফুলদানিতে জমানো
একগুচ্ছ পুস্পের মত। মনটাই বা কি চায় আমার কাছে
না কিছু লুকোয়, চায় কি কিছু পেতে,
নাকি পেয়ে হারাতে !! এত সব প্রশ্ন
তবুও ভাসা- ভাসা, মেঘের মত-
নয়তো

কে তোমার কাছে এসেছিলো কাল রাতে ? তুমি তো রমণী শুধু নও। তবু কেন জানালার
কার্নিশে চিবুক রেখে প্রলয়ের স্বপ্ন দেখো ?
বাতাসের গর্ভ থেকে-
প্রসূত জন্মের পাপ কখনও সম্ভব নয়
মুছে ফেলা। মোহনীয় দুটি হাতে
বরং এখনই তুলে নাও শর্তহীন ফল। ভৌতিক

যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নিনির্মেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে

একটি রাত্রি বাসা বাঁধে এই বুকে
একটি রাত্রি মহাকাশে মেলে ডানা
নির্জনতায় অন্ধকারের শিখা
করোটিতে জ্বালে বুনো গন্ধের ভয়। একটি রাত্রি নদী নয়, তবু নদী
আরক্ত কষ্ট গড়ে নিরুক্ত দ্বীপ
কষ্টকে কেউ চেনে না বিশ্বময়
তাবৎ পুরাণ ঘেঁটেও গ্রন্থাগারে। কম কথা নয় সমুদ্রপাড়ি

তবু কথা থাকে
বলেছেন একজন। সন্ধ্যের পরেও কথা থাকে;
রক্ষিতার মত সঙ্গোপনে রাতের নির্জন কথা
দুপুরের শেষ মৃত্যুর পরেও থেকে যায় অপরাহ্নের সংলাপ। কোন এক গোপন ঈঙ্গিতে চারটি চোখের রঙ বদলে- যাওয়ার মত
আবেশে স্পন্দিত, বৃষ্টির পরেও মেঘ-মেঘ আকাশে ভাসে
শুভ্র কথার

আজ আমি শান্ত।
থামিয়ে দিয়েছি আমার জীবনের সকল বসন্ত;
আজ আমার জীবন হয়েছে পুষ্প-শূন্য
শীত বৃক্ষের মতো। দেখে যাও আমার জীবনের গোধূলি- বেলা
যেখানে আছে শুধু আলো- আঁধারের খেলা
ডুবছে যেন অন্ধকারে বানানো কঠিন ভেলা
কি ত্রুটি ছিলো আমার অচেনা সুরের মেলা। হায় !! একেলা তিমিরের

দূর- দিগন্ত কুয়াশায় যায় ঢেকে
কনে- দেখা- আলো ধূসর ঘোমটা টানে
কড়ি ও কোমলে, প্রদোষের অভিষেকে
শিশিরের সুর বাজে মৃদঙ্গ- তানে। পৃথিবীর শেষ প্রান্তিক তটরেখা
অবগুণ্ঠিতা প্রসারিত মহাকাশে
ময়ূরপুচ্ছ জলের চিত্রলেখা
উধাও অতীতে অতুল সর্বনাশে। ভৈরবীদের ব্যাপ্ত জটার চুলে
সিজ্জিন- কাল বিদিশার নিশা

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়
ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে
শিউলি শৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন
তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর

শীতের সনেটে ঝরে আষাঢ়ের বৃষ্টি
পথ করে দিলো প্রলয়ের পথ সৃষ্টি
ধুয়ে ভেসে যায় অম্ল- মধুর কৃষ্টি। ক্ষারের প্রভাবে মুমূর্ষু ঘিলু- মজ্জা
মুখোশ এখানে অভিনন্দিত সজ্জা
এভিনিউ জুড়ে হাঁটে অশ্লীল লজ্জা। গাঢ়তর এক ঝড়- ঝঞ্ঝার রাত্রে
লুসিফার আসে কানা গলি- খুঁজি হাতড়ে
বুড়ো

স্পর্শ কর আমার আমূল স্তব্ধতাকে অনুভবের দুঃসহ ভার
সর্বসত্তা জুড়ে আমার-
ঘুমের মত না- দেখা এক, কাঙ্খিতাকে দূর্বিপাকে
খুঁজে বেড়ায়। কেউ কি জানে, কেউ কি দেখে
এই অবেলায়;
মেঘের মালা থেকে
খুলে গেছে নিবিড় পরম্পরা !! রুদ্ধ ভাটিয়ালী
চরাচরে অবিশ্বাসের চড়া
বৈতরণীর পারে

বিরাট কৃষ্ণচূড়া গাছটি
বেড়ে উঠল অবলীলায় অবহেলায়-
প্রকৃতির ছত্রছায়ায়, আপন মনে
রাজপথের মাঝখানে। অবৈধ তার জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা
সগর্বে ঘোষনা করলো রাজ কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু অবুঝ কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি
এখনও বোঝে না বৈধতা বা অবৈধতার প্রশ্ন।
উপড়ে ফেলা হবে তাকে
এই কিছুক্ষণের মধ্যেই। ক্লোরোফিলের কার্যক্রমে পত্রগুলো

একটি বিকেল অনুভবে নুয়ে পড়ে
মগবাজারের রেলক্রসিঙের কাছে
থমকে দাঁড়ায় বিষ্মরণের ট্রেন
মনে পড়ে গত রাত্রির ব্যাকুলতা। ডাবল ডেকারে ব্যস্ততা ছুটে চলে
নুলো ভিখিরীরা বিধাতার নাম জপে
মার্সিডিজের ফুয়েলে ঘামের ফোঁটা
একটি বিকেল কমলা রঙের স্মৃতি। বাসষ্টপে তুমি কখনও ছিলে না জানি

সুব্রতা, তুই কি আসবি একটু, আমি যে একা পড়ে আছি বারে !!
ঝিমিয়ে পড়েছে শহর, বয় বেয়ারাদের গোছগাছ
শেষ হয়ে যাচ্ছে, এখনি বন্ধ করে এই অভিজাত বার,
চলে যাবে সবাই ঘরে যে যার। ওই যে, ওর সাথে ফিরবো না আজ এই

একটি দুপুর দীর্ঘ থাবার প্রতীক
উত্তরে আর দক্ষিণে গরমিল
একটি দুপুর সন্তাপে অস্থির
গ্রন্থিবিহীন অনুষ্টুপের মাত্রা। সূর্যের কাছে নতজানু সাদা অভ্র
একাকী ঘুঘুর কন্ঠে মূর্ত বোধ
দিগন্ত জোড়া অবরোধ শাসনের
অভিযোগমালা তবুও দুর্নিরীক্ষ্য। একটি দুপুর দুঃস্বপ্নের আততি
ঘুম- ভাঙ্গা রোদে ঝিম- ধরা